সারাদেশসাহিত্য

কনেদেখা

লেখকঃ- সুবর্ণা দাস

এইচ এস সি পাশ করে কেবলমাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছে ঋতু। এরই মধ্যে বিবাহের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে! ঠাকুমা জেঠিমা কাকিমাদের সচেতন বাড়াবাড়িতে অবশেষে ঋতুর বাবা রিপন রায় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজী হলেন।
আজ কনেকে দেখতে আসবে, এই উপলক্ষ্যে বেশ বড়সড় আয়োজনই চলছে! বাড়ির লোকজন ছেলেপক্ষ আত্মীয়স্বজন সব মিলিয়ে ৭০ জনের মতো মানুষ খাবে দুপুরে। কনে দেখানো মানেই যেন এক বিয়ের খরচ, তারপরও এক দেখায় যদি গতি হয় তো ভালোই। অপেক্ষা উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে বিকেল তিনটায় ছেলেপক্ষ কনে বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো! দেরী হয়ে যাওয়াতে একবারে খাওয়া দাওয়া সেরে পরে কনে দেখার প্রস্তাব গৃহীত হলো৷ মাছ মুরগী খাসি সবজি সবই ছিল আয়োজনে, বেশ তৃপ্তি সহকারে খেলেন ছেলেপক্ষ!

এবার মেয়ে দেখার পালা, একটু রেস্ট নেওয়ার পর মেয়েকে আনা হলো, সাথে পাড়া পড়শি কয়েকজন, গ্রামে মেয়ে দেখতে আসা মানেই কৌতুহলী জনতার ভিড়! একের পর এক প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে লাগলো মেয়েটি, এ যেন জীবন কারাগারে ঢুকানোর আগে কঠিন ধৈর্য পরীক্ষা করা! এদিক ওদিক তাকিয়ে খুব অস্বস্তি ফিল করছিল ঋতু।
কিছু পারছে তো কিছু অজানা!

এবার আসলো অন্যরকম কিছু বিষয়, তার হাতে কাগজ দেওয়া হলো নাম ঠিকানা লিখতে, এরপর বলা হলো হেটে দেখাতে, এরপর পায়ের পাতা দেখা হলো, দেখা হলো হাতের রেখা, আর হাতে পায়ের আঙুল, এবার মাথার চুল দেখানোর কথা বলাতে, ঋতুর মাস্টার্স পড়ুয়া বড় ভাই আচমকা হুংকার দিয়ে উঠলো: ” কি পেয়েছেন আপনারা? আমার বোনকে যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন! সে নিজ পায়ে হেটে হেটে এতটুকু বড় হয়নি? নাকি তার হাটাচলা আপনারা করে দিয়েছেন? সে লেখাপড়া শিখেই এইচ এস সি পাশ করেছে। আর এত এত প্রশ্ন যে করলেন সে কি বিসিএস পরীক্ষা দিতে এসেছে এখানে? তার ভাগ্য কেমন আমরা তো কখনো যাচাই করিনি, আমার মা বাবা তো হাতের রেখা কখনো দেখেনি, তাদের মেয়ে কুলক্ষণা হলে কি মেয়েকে মা বাবা ফেলে দিবে? সে দেবগণ না নরগণ তাতো কখনো আমরা দেখতে যাইনি, দেবগণ নরগণ এসব দিয়ে কী আপনারা তার ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দিতে পারবেন? মাথায় টাক নেই দেখছেন, এরপর আবার চুলগুলো খুলে দেখার কি হলো? আরে আমার বোন কি চিড়িয়াখানার জন্তু যে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটে খুঁটে দেখতে হবে! যথেষ্ট হয়েছে, আপনারা চলে যান, আমরা এখন বোনকে বিয়ে দিবো না, পড়াশোনা শেষ করে সে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, এরপর বিয়েশাদীর চিন্তা!

রতন এর এরূপ ঔদ্ধত্যে উপস্থিত ছেলেপক্ষ অপমানিত বোধ করে ঘচঘচ ঘচঘচ করতে করতে বের হয়ে গেলো! উপস্থিত পরশিরা কেউ হাসছে, কেউ কানাকানি করছে, কেউবা বাহ্বা দিচ্ছে! তবে এরূপ প্রতিবাদে মেয়ের মা বাবা বেশ খুশিই হয়েছে। ছেলের দায়িত্ববোধ আর বোনের প্রতি মায়া দেখে মা অনেকটা কেঁদেই ফেললো। নাড়ি ছেঁড়া ধন, কত ঝড় ঝাপটা গেলো জীবনের উপর দিয়ে তাও কখনো সন্তাদের উপর কোনো আঁচ লাগতে দেয়নি! মা চোখ টলমল জল নিয়ে ছেলের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করতে করতে বললো, বোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় শিক্ষিত করে তবেই বিয়ে দিস বাবা!

Related Articles

Back to top button
Share via
Copy link
Powered by Social Snap